দেশের অন্যতম বৃহৎ পশুর হাট হচ্ছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় গোবিন্দাসী হাট। এ হাটকে কেন্দ্র করে ছোট-বড় অসংখ্য গরু-মহিষ জন্য ‘আবাসিক হোটেল’ গড়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এ হাটে গরু কেনা-বেচা করেন। তারা ক্রয়কৃত গরু ও অবিক্রীত গরু হাটের আশ-পাশে গড়ে ওঠা এসব আবাসিক হোটেলে রাখেন। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন, তেমনি স্থানীয় অসংখ্য পরিবার গরু-মহিষের জন্য আবাসিক হোটেল করে তাদের সংসার চালাচ্ছেন। কোরবানি ঈদ এলে এসব আবাসিক হোটেলে ব্যবসায়ীদের আরও কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়।
এসব আবাসিক হোটেলে রয়েছে গরু, মহিষ ও ছাগলের জন্য নির্ধারিত স্থান এবং থাকা খাওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তরে প্রতিষ্ঠিত এ হাট। স্থল ও নৌ-পথে যাতায়াতসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় যমুনা নদীর তীরে গোবিন্দাসীতে গরুর হাট গড়ে উঠেছে। এ গরুর হাটের আশেপাশে প্রায় ৩ শতাধিক আবাসিক হোটেল পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু করোনাকাল থেকে আবাসিক হোটেলগুলো হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে অর্ধশতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে।
আবাসিক হোটেলগুলো গড়ে উঠার ফলে হাটে যেমন সৃষ্টি হয়েছিল নতুন কর্মসংস্থান, তেমনি ব্যবসায়ীদের জন্য সৃষ্টি হয় নিরাপদ পরিবেশে পশু বেচা-কেনার সুযোগ। এ কারণে অল্প সময়ে গোবিন্দাসী হাট পরিচিতি পাওয়ার পাশপাশি দেশের বৃহত্তম পশুর হাটে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের চলতি জুলাইয়ে বৃহৎ এ হাটের বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। খাজনা বেশি, ছিনতাই ও নানা কারণে দেশের উত্তরবঙ্গসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখন আসছে না এ হাটে।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ৮০-এর দশক থেকে উপজেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী গোবিন্দাসী এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় হাট। ধীরে ধীরে পরিচিতি পায় হাটটি। এ ছাড়া দেশি ও ভারতীয় গরু আসায় খুব অল্প দিনেই পাইকারদের নজর কাড়ে এই গোবিন্দাসী গরুর হাট। ৯০ দশকে এসে জমজমাট গরুর হাটে পরিণত হয় এটি। সপ্তাহের রবি ও বৃহস্পতিবার বসে হাট। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জমজমাট বেচা-কেনা হয়। সেসময়ে এ হাটে সরকারি কোন কোন স্থাপনা বা অবকঠামো নির্মাণ না হলেও বর্তমানে আমূল পরিবর্তন এসেছে এ হাটের।
শুরুর দিকে দূর-দূরান্তের বড় বড় পাইকাররা গরু এনে হাটের আশপাশের মানুষের বাড়ির সামনে জড়ো করে রাখতেন। ঝড়-বৃষ্টির সময় এসব বাড়ির গোয়াল ঘরেই জায়গা পেত পাইকারদের গরু। বিনিময়ে তারা বাড়ির মালিককে দিতেন অর্থ। টাকা রোজগারের এমন সহজ সুযোগ আর পাইকারদের চাহিদার কারণে পশুর জন্য হাটের আশপাশের বাড়ির মালিকরা তাদের খোলা জায়গায় গড়ে তোলেন টিনের ঘর। ভাড়ার বিনিময়ে শুরু হয় সেখানে গরু রাখা। ফলে ওই ঘরগুলো পরিচিতি লাভ করে গরুর আবাসিক হোটেল হিসেবে। লাভজনক হওয়ায় দিনদিন বাড়তে থাকে এই হোটেলের সংখ্যা। এ প্রসঙ্গে গরুর পাইকার শাহীন ব্যাপারী জানান, আবাসিক হোটেলে রাখা হয় গরু-মহিষ। হাটের দিন অবিক্রি গরু আবাসিক হোটেলে রেখে চলে যান দূরের ব্যবসায়ীরা। হোটেল থাকার কারণে তাদের গরু ফিরিয়ে নেয়ার ঝামেলা থাকে না। ফলে পরবর্তী হাট পর্যন্ত গরুগুলো দেখাশোনা করেন হোটেল মালিকরা। এতে গরু প্রতি সপ্তাহে ৫০০-৭০০ টাকা ভাড়া নিয়ে থাকে। পাইকাররাও মাত্র ১৫০-২০০ টাকায় সেরে নিতে পারেন তাদের খাওয়া-দাওয়া। স্থানীয় গোবিন্দাসী হাটের আবাসিক হোটেলে ঈমান আলী জানান, তার হোটেলের প্রতি হাটেই প্রায় অর্ধশতাধিক গরু থাকে। হোটেল থেকে প্রতি হাটে তিনি এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করে থাকেন।
গোবিন্দাসী হাটের ইজাদার জাহিদুল ইসলাম খোকা বলেন, এ বছর হাটের ইজারা ৫২ লাখ টাকা। লোকসানের আশঙ্কা জেনেও ঐতিহ্যবাহী গোবিন্দাসী হাটকে আবারও আগের রুপে ফিরিয়ে আনার জন্য সবধরণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। হাটে এ বছর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। হাটে কোন প্রকার ট্রাক টোকেন, লোড-আনলোড ফি মুক্ত রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও কোন প্রকার চাঁদাবাজি, ছিনতাই যাতে না হয় সেলক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে জানতে চাইলে ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম বলেন, হাটে বিভিন্ন ধরণের ছিনতাই, চুরি, জাল টাকা ও ডাকাতরোধে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এছাড়াও ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের নিরাপত্তার লক্ষে সার্বক্ষণিক বিশেষ নজরে রাখবে পুলিশ সদস্যরা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. ইশরাত জাহান বলেন, হাটে আসা ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের পক্ষে থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।